বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছে ৮৬ শতাংশ

0
890

করোনার ধাক্কায় দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে যে বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে, তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮৬ শতাংশ কম। তবে আশার আলো দেখিয়েছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা। ছয় মাসে তাদের প্রস্তাব বেড়েছে ১৩৯ শতাংশ।

বিডার তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে ৫৭টি বিদেশি ও যৌথ শিল্প প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন করেছে। তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার কম। গত বছরের একই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল ১৪০ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের। আর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬০টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিদেশে দেশের বিনিয়োগ সুবিধাগুলো তুলে ধরতে হয়। সরাসরি যোগাযোগ করতে হয় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। কিন্তু করোনার কারণে গত দেড় বছরে তা সম্ভব হয়নি। এক দেশ থেকে আরেক দেশে গেলে করোনা নেগেটিভ থাকার সনদপত্র নিয়ে যেতে হয়। এরপর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। এ ঝামেলায় পড়তে চান না বিনিয়োগকারীরা। সে কারণেও কমেছে বিনিয়োগ প্রস্তাব। তবে ভবিষ্যতে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ আসতে পারে বলে আশা করছেন তিনি।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি রূপালী চৌধুরী সমকালকে বলেন, পুরো বিশ্বেই এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমাটাই স্বাভাবিক। তবে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। দেশে ব্যবসার পরিবেশ কেমন, সে বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে চীন-জাপানসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ বাড়বে।

তবে বিনিয়োগের জন্য বিদেশিরা তেমন এগিয়ে না এলেও বসে নেই দেশের উদ্যোক্তারা। চলতি বছরের প্রথম দিকে বিডায় ছয় মাসে স্থানীয় বিনিয়োগের নিবন্ধন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ৪৫৭টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়ে ৩১১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের একই সময়ে ২৭৭টি প্রতিষ্ঠান ১৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

এ সময়ে মোট বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে ১৮০টি।

দেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে বিনিয়োগ নিবন্ধনও বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিডায় স্থানীয় ও বিদেশি মিলে মোট ৫১৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করার জন্য নিবন্ধন করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৩৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬০ কোটি ১১ লাখ ডলার বেশি। ওই সময় বিনিয়োগ প্রস্তাব আসে ২৭০ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের। আর বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন করে ৩৩৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। গত বছর রাসায়নিক, কৃষি, সেবা এবং প্রকৌশল খাতে বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এলেও এখন বেশি প্রস্তাব আসছে বিদ্যুৎ খাতে।

নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের বিনিয়োগই বাড়বে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সমকালকে বলেন, ভবিষ্যতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হলে

বিনিয়োগ প্রস্তাব অনেক বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে বিলম্ব হলে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাবে। সে জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে দ্রুত প্রস্তুত করতে হবে। এ ছাড়া যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে অন্য বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ পাবেন।

করোনার সংকট কেটে গেলে দেশে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। তিনি সমকালকে বলেন, বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। সেগুলোর কাজ শেষ হলে চীন, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেক বিনিয়োগ আসবে। সে জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী করে তোলার কাজ চলছে।

বিডার কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঢাকায় দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফর করেছে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছয় মাসব্যাপী যে ট্রেড শো চলছে, তাতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here