চট্টগ্রাম বন্দরের বহু কাঙ্ক্ষিত বে-টার্মিনালের জমি অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর পাচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদনের পর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেওয়া এক পত্রে ভূমি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সাল থেকে বে-টার্মিনালের জন্য পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে জমি পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় ৬৮ একর জমি সরকারি ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী ক্রয় করে উক্ত উন্নয়নকাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে বাকি প্রায় ৮০৩ একর জমি খাস হওয়ায় তা পেতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে সরকারের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির পক্ষ থেকে উক্ত জমি অনুমোদন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খাসজমি প্রতীকী মূল্যে কিংবা বিনা মূল্যে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য আবেদন করে। কারণ সরকারি ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী উক্ত জমির মূল্য পরিশোধ করতে হলে বন্দরকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পটির ঐ ৮০৩ একর জমির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় প্রকল্পও প্রলম্বিত হচ্ছিল। বে-টার্মিনাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে চট্টগ্রামসহ দেশের ব্যবসায়ী মহল দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির ব্যাপারে সরকার থেকে অনুমোদনসহ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বে-টার্মিনাল এলাকায় তিনটি বড় টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে করবে। বাকি দুটি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি (পিএসএ), দুবাই পোর্টসহ (ডিপি ওয়ার্ল্ড) কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে একটি টার্মিনাল নির্মাণ করলেও বাকি দুটি টার্মিনাল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান ইত্তেফাককে বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জমি শেষ পর্যন্ত আমরা পাচ্ছি।’ তিনি এর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
জানা যায়, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেওয়া চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দরকে বে-টার্মিনালের জন্য ৮০২ দশমিক ৩ একর খাসজমি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে হস্তান্তর করার জন্য বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উক্ত চিঠির একটি কপি চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান কিছুদিনের মধ্যে জমি হস্তান্তর সম্পন্ন হবে বলে আশা করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরসংলগ্ন পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ একর জমি নিয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি জমি সমুদ্র উপকূল ভরাট করে উদ্ধার করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে আগামী অর্ধশত বছর পর্যন্ত দেশে কোনো নতুন বন্দর নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে না বলে বন্দর সংশ্লিষ্টদের অভিমত।