পাঁচ প্রতিষ্ঠানের হাতে বে পাইলটিং, ক্ষুব্ধ শিপিং এজেন্টরা

0
520

চট্টগ্রাম বন্দরে গভীর সমুদ্র থেকে বন্দরের বহির্নোঙরে বে পাইলটিংয়ের দায়িত্ব পাঁচ প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, এই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাতের বে পাইলটিংয়ের জন্য যে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হবে তাতে জাহাজে পণ্য পরিবহন ব্যয় অত্যধিক বেড়ে যাবে। ফলে অতিরিক্ত ব্যয় পুষিয়ে নিতে আমদানি পণ্যেরও দাম বৃদ্ধি পাবে। তারা বলেন, এই প্রক্রিয়াটি চট্টগ্রাম বন্দর আইন ১৯০৮ এবং বন্দর অর্ডিনেন্সের অনুমোদনের বাইরে। নেভিগেশনাল ফেসিলিটেটর চার্জ বিধিবদ্ধ পোর্ট ট্যারিফ দ্বারা নির্ধারিত নয়।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক সূত্র জানায়, শিপিং এজেন্টরা প্রচলিত নিয়মে তাদের স্ব স্ব উদ্যোগে সহনশীল মাশুলে বে পাইলটিংয়ের বিষয়টি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর বন্দরের নৌবিভাগ কর্তৃক জারি করা একটি অফিস আদেশের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ডিপ ড্রাফট জাহাজের আগমন-নির্গমন নিরাপত্তার জন্য নেভিগেশনাল ফেসিলিটেটরস নামে অনভিজ্ঞ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের হাতে বে পাইলটিং অর্পণের উদ্যোগ নেওয়া হয় সম্প্রতি। তালিকাভুক্ত হয়ে এসব প্রতিষ্ঠান কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর পর্যন্ত পাইলটিং সেবার মাশুল জাহাজপ্রতি দেড় হাজার ডলার চায়। এর বাইরে ভারসাম্য না আসা পর্যন্ত প্রতিদিন ৩০০ ডলার করে চেয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মাশুল আদায়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে পারে বলেও সূত্রগুলো আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

এদিকে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বে পাইলটিংয়ে তালিকাভুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ‘নাম সর্বস্ব ও অনভিজ্ঞ’ আখ্যায়িত করে নেভিগেশনাল ফেসিলিটেটর হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি বাতিল চেয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছে। ৬৫টি শিপিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রী বরাবর এই চিঠি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র ইত্তেফাককে বলেন, বিষয়টি আমরা আগে জানতাম না। কিন্তু অবগত হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। বে পাইলটিংয়ে তালিকাভুক্তি যদি নিয়মমাফিক হয়ে না থাকে তাহলে হয়তো ভিন্ন সিদ্ধান্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ইত্তেফাককে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের আলাপ হয়েছে। তিনি বে পাইলটিংয়ে তালিকাভুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠানের পাইলটিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি ড. পারভেজ সাজ্জাদ আকতার বলেন, যারা বে পাইলটিংয়ে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি সেরকম দুয়েক জনের স্বার্থে এই কার্যক্রম বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অথচ যারা তালিকাভুক্ত হয়েছে তারা এই কাজটি পেয়েছে মাত্র দুই বছরের জন্য ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে দেড় হাজার জাহাজ বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করে। এর মধ্যে সাড়ে ৯ মিটারের গভীরতার প্রায় ১ হাজারের বেশি জাহাজ রয়েছে। সাড়ে ৯ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজগুলোকে বে পাইলটিংয়ের এই মাশুল গুনতে হবে। বর্তমানে সাগর থেকে জেটিতে ভিড়ানোর সময় বন্দরের পাইলটরা এই সেবা দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর মাশুল আদায় করে। নেভিগেশনাল বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এটি বন্দরের আওতায় রেখেছে। অথচ বে পাইলটিংয়ের সেবা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি খাতে।

যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে বে পাইলটিংয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো, জুনের শিপিং লাইনস, আয়ার শিপিং সার্ভিসেস, বাংলাদেশ সি গোয়িং পাইলট সার্ভিস কোম্পানি, কেএমসি শিপিং ও ডিএমএসসি। শিপিং এজেন্ট হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকলেও খুব পরিচিত নয়। কোনো জাহাজ হ্যান্ডলিং করার অভিজ্ঞতা নেই এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যদিও বন্দর তালিকাভুক্তির সময় শুধু শিপিং এজেন্ট হিসাবে লাইসেন্স থাকার শর্ত দিয়েছিল। আবার বে পাইলটিংয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদেরও তালিকাভুক্তির সময় রাখা হয়নি। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান যাতে অংশ নিতে পারে সেজন্য বন্দরের সাবেক পাইলট রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ আরো বলেন, শিপিং ব্যবসায়িরা চান না ভবিষ্যতে জিম্মি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হোক। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভালো হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here