বাংলাদেশ ভুটানের বেশির ভাগ পণ্যই শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে যাচ্ছে

0
367

শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানি-রপ্তানির লক্ষ্যে বহুল আলোচিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ শুরু হচ্ছে আজ রবিবার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজকের চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রথম দ্বিপাক্ষিক এফটিএ বা পিটিএ জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর আগে কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি নেই। তবে আঞ্চলিক কিছু চুক্তির সঙ্গে রয়েছে। ফলে এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা এর মাধ্যমে উভয় দেশের বেশির ভাগ পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য শুরু হবে। অন্যদিকে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটিও ঐতিহাসিকভাবে তাত্পর্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভুটান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ। সেই স্বীকৃতি ছিল আজকের দিনে, অর্থাত্ ৬ ডিসেম্বর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে (সাবেক রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন—সুগন্ধা) এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি এতে উপস্থিত থাকবেন। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবেন উভয় দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বেশি নয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে উভয় দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে চার কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ৪৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে আমদানি করেছে ৪ কোটি ডলারের পণ্য। তা সত্ত্বেও অর্থনীতিবিদরা এই চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছেন। পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ভুটানের সঙ্গে পিটিএ হবে প্রথম কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের চুক্তি। বাণিজ্যের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এটি বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে পরবর্তী চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউওটিও সেলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকেই উভয় দেশের কিছু পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। তবে পিটিএ স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ ভুটানের বাজারে প্রায় ১০০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। আর বাংলাদেশে ভুটানের ৩৪টি পণ্য এই সুবিধা পাবে। ডব্লিউওটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, এর মাধ্যমে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যের বেশির ভাগই শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় চলে আসবে। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রালয় আরো অন্তত ১১টি দেশের সঙ্গে এফটিএ কিংবা পিটিএ করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আগামী দুই-তিন বছরে আরো ১১টি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি হবে বলে আশার কথা জানিয়েছেন। বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আগামী ২০২৪ সালে স্বীকৃতি পাওয়ার পর বিশ্বের অনেক দেশের শুল্কমুক্ত রপ্তানিসুবিধা হারানোর পরিস্থিতিতে বিশ্ববাণিজ্যে টিকে থাকতে এ ধরনের চুক্তি করতে হবে বলে জানান তিনি। যদিও ঢালাও এফটিএ বা পিটিএতে আপত্তি রয়েছে রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এনবিআর সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে যেসব দেশে বাংলাদেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি ঐসব দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে। কেননা এতে বাংলাদেশকে রাজস্ব ছাড় দিতে হবে বেশি। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাস্তবতা বিবেচনায় বাংলাদেশকে এফটিএ, পিটিএ কিংবা এ ধরনের আঞ্চলিক চুক্তিতে যেতেই হবে। ভুটান ছাড়াও যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চলছে ঐ তালিকায় রয়েছে—থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, সৌদি আরব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here