দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থপাচার ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। অর্থপাচার রোধে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে রবিবার (২২ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। আদালত বলেন, ‘প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি অর্থ কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে এবং পাচারকারীদের অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা। এই যে টাকাগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছে, তাদের নাম ঠিকানা কী, সেটাতো তো জানা দরকার। তারা কীভাবে অর্থপাচার করলো? যারা অর্থপাচার করলো, তারা দেশ ও জাতির শক্র। তারা দেশ ও জাতির সঙ্গে বেইমানি করছে বলে আমি মনে করি। কারণ দেশে পড়াশোনা করে দেশের মাটিতে থেকে দেশের বাইরে টাকা পাচার করবে, এটা কী বেইমানি নয়? কাজেই এগুলো আমাদের দেখা দরকার।’ আদালত আরও বলেন, ‘তাদের (অর্থপাচারকারীদের) নাম, ঠিকানা; কীভাবে অর্থ পাচার করলো; কীভাবে বিদেশে বাড়ি তৈরি করলো—এটা জানা দরকার। না হলে তো অপরাধটা কমবে না।’ এ সময় দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘এটা কালচার হয়ে গেছে।’ তখন আদালত বলেন, ‘দেশের মাটিতে থাকবে, দেশে পড়াশোনা করবে, কিন্তু শেষপর্যন্ত দেশকে ঠকিয়ে দেশের টাকা বাইরে পাচার করবে, এটা তো হতে পারে না। এটা কীভাবে সম্ভব? দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে এটা কখনও করতে পারে না। এভাবে আমরা দুর্বৃত্তদের গ্রহণ করতে পারি না। দেশের টাকা বাইরে অবৈধভাবে চলে যাবে এবং অবৈধ পথে যাবে, আমাদের এতগুলো আইনগত সংস্থা, কোর্ট আছে; অবশ্যই এগুলো বন্ধ করতে কাজ করতে হবে। যদি আমরা মনোযোগ না দেই, সবাই যদি কাজ না করি দেশকে উন্নত করার জন্য; দেশ কীভাবে উন্নত হবে? আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। সে লক্ষ্যে অর্থপাচার, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’ এরপর আদালত আদেশ দিয়ে বলেন, ‘যারা দুর্বৃত্ত, বিদেশে টাকা পাচার করছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো—অবৈধভাবে কোনও টাকা পাচার করা যাবে না।’ একইসঙ্গে বিদেশে অর্থপাচারে জড়িতদের যাবতীয় তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে অর্থপাচারের ঘটনায় রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউতে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা নয়, বিদেশে বেশি অর্থপাচার করেন সরকারি কর্মচারীরা। আমার ধারণা ছিল, রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এরমধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চার জন। এছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি।’ এরপর দেশের বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিলেন হাইকোর্ট।