করোনা সামলে অর্থনীতি সচল রাখা

0
530
  • মহামারির ব্যাপ্তির সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্পর্ক আছে বলে দেখা যাচ্ছে। আবার মানুষের কর্মকাণ্ডের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে।
  • বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক চীন ছাড়া সব বড় অর্থনীতিই সংকুচিত হয়েছে। এদের মধ্যে ভারতের সংকোচন হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
  • বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে পেরুতে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। আর কোভিড-১৯-এ প্রতি ১০ লাখে মারা গেছেন ৯৩৯ জন।

কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতি রীতিমতো কাঁপছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক চীন ছাড়া সব বড় অর্থনীতিই সংকুচিত হয়েছে। এদের মধ্যে ভারতের সংকোচন হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। কোভিডের প্রভাব তো আছেই, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলছেন, মহামারি কীভাবে সামলানো হয়েছে, তার ওপরও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্ভর করছে।

তবে মহামারির ব্যাপ্তির বিশেষ করে মৃত্যুহারের সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্পর্ক আছে বলে দেখা যাচ্ছে। যেমন বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে পেরুতে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। আর কোভিড-১৯-এ প্রতি ১০ লাখে মারা গেছেন ৯৩৯ জন। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক সংকোচনের সঙ্গে এই পরিসংখ্যানের যোগ আছে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মৃত্যু হয় ৬২৯ জনের। আর এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটির অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে প্রতি লাখে মারা গেছেন ৬১৩ জন, তাদের সংকোচন হয়েছে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। স্পেনের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৬৪৭ আর এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সংকোচন হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন

প্রবৃদ্ধি (এপ্রিল–জুন) ও কোভিডে মৃত্যু
দেশ১০ লাখে মৃত্যু
চীন
ভিয়েতনাম০.৪
শ্রীলঙ্কা০.৬
জাপান৩৭

আবার এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায় ভারতে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৬৮ জনের মৃত্যু হলেও সংকোচন হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। মালয়েশিয়ার সংকোচন ১৭ দশমিক ১ শতাংশ হলেও প্রতি ১০ লাখে মারা গেছেন মাত্র ৪ জন। সিঙ্গাপুরের সংকোচন ১৩ দশমিক ২ শতাংশ হলেও প্রতি ১০ লাখে মারা গেছেন ৫ জন। থাইল্যান্ডের বেলায় সেটা আরও কম, সংকোচন ১২ দশমিক ২ শতাংশ, মৃত্যু ১০ লাখে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ দশমিক ১২। অর্থনীতিও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গত দুই মাসে রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। দেশে জিডিপির ত্রৈমাসিক হিসাব করা হয় না। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ তিন মাস সাধারণ ছুটির মধ্যে পড়লেও সেবার প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, যদিও এই পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বোদ্ধা মহলের আপত্তি আছে।

কোভিড নিয়ন্ত্রণে দেশে সমন্বিত ব্যবস্থা না থাকলেও ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই), মাস্ক প্রভৃতির রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে এই তৈরি পোশাক খাত থেকে।
বিজ্ঞাপন

এই প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু মনে করেন, সরকারের নীতিগত অবস্থানের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। অর্থাৎ অর্থনীতি ধ্বংস না করেই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন—এটাই হচ্ছে মূল কথা। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে কৌশিক বসু বলেন, বিপুল সংখ্যায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হলে বোঝা যাবে কাদের কোভিড হয়ে গেছে এবং শরীরে অ্যান্টিবডি আছে। তো সেই মানুষদের উচ্চ বেতন দিয়ে হাসপাতাল ও সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়—এমন কাজে নিয়োগ দেওয়া যায়। এই মানুষদের অরক্ষিত মানুষের সংযোগস্থল হিসেবে ব্যবহার করে যেমন সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা যেত, তেমনি ভাইরাসের সংক্রমণও রোখা যেত। তাতে ভারতের মতো লকডাউন করার প্রয়োজন হবে না, যেখানে লকডাউনের মধ্যে লাখ লাখ শ্রমজীবী রাতারাতি কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরেছেন এবং ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ এতে দুই দিক থেকেই ক্ষতি।

এ সময় দরকার যথাযথ নীতি। এক টুইট বার্তায় কৌশিক বসু বলেন, অর্থনীতিকে আরও প্রণোদনা দিতে হবে। সব প্রতিভাবান মানুষকে এক ছাদের নিচে আনা হলে যথাযথ নীতি প্রণয়ন করা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here