বিদেশে কৃষিতে বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে

0
329

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশে কৃষি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। আমদানিনির্ভর কৃষিপণ্যের চাহিদা মেটাতে এবং উদ্ভিদের কৌলিক সম্পদ (প্লান্ট জেনেটিক রিসোর্সেস) বিনিময়ের মাধ্যমে উদ্ভিদের জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদেশে কৃষিতে বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় বহির্বিশ্বের কৃষি বিনিয়োগ নীতি-২০২০ প্রণয়ন করছে। ইতোমধ্যে নীতির খসড়া তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। খসড়া নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টের আওতায় বিদেশে কৃষি খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারবে। অবশ্য তার আগে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। নীতির আওতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের কৃষিতে বিনিয়োগ ক্ষেত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদ, বিনিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালাসহ অন্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ সম্ভাবনাময় দেশের তালিকা তৈরি করবে। প্রয়োজনে বিদেশের দূতাবাসে একজন কৃষিবিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে। কর্তৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহীদের প্রস্তাব অনুমোদন দেবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘বিদেশে কৃষিতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে খসড়া নীতিটি করা হয়েছে। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’ নীতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কৃষিতে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা, ব্যাংক ঋণ ফেরতসহ ব্যবসায়িক ট্র্যাক রেকর্ড, সুনাম, বিগত বছরের লেনদেন ও ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হবে। এক্ষেত্রে যেসব দেশে বাংলাদেশিদের কাজ করার এবং আয়কৃত অর্থ পাঠানোর অধিকার রয়েছে, সেসব দেশে বিনিয়োগ করা যাবে। পাশাপাশি দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি রয়েছে, মূলধনসহ লভ্যাংশ ফেরত আনার সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশে বিনিয়োগ বিবেচিত হবে। কোনো অবস্থাতেই জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা অন্য সংস্থার নিষেধাজ্ঞা আরোপকৃত দেশে বিনিয়োগ করা যাবে না। উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করতে হবে। বিনিয়োগকৃত মুদ্রায় সম্পূর্ণ তহবিল প্রত্যাবাসনে বিনিয়োগকারী কোম্পানি আইনগতভাবে বাধ্য থাকবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, অনেক দেশে প্রচুর আবাদি জমি পড়ে আছে। সেখানে কৃষিতে বিনিয়োগ করা যেতেই পারে। তবে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সেখানে নেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্তত মোট কর্মরত শ্রমিকদের অর্ধেক যাতে বাংলাদেশ থেকে নেয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এতে কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স দুটোই বাড়বে। তিনি আরও বলেন, পুরোপুরিভাবে বিনিয়োগ ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। কারণ আমাদের মধ্যে টাকা পাচারের প্রবণতা বেশি রয়েছে। নীতির ভূমিকায় বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন ও রফতানি এবং সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেস টু কেস ভিত্তিতে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, বিদেশে বিনিয়োগ দেশে ফেরার সম্ভাবনা, সংশ্লিষ্ট দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি ও সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশ, ভূমি ব্যবস্থাপনা বিবেচনাপূর্বক কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কৃষিতে বিদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে অর্জিত আয়ের মাধ্যমে জিডিপি বর্ধন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, কৃষিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা চিহ্নিতপূর্বক স্থানীয় বাজার ও স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে সম্ভাব্য লাভজনক বিনিয়োগ ক্ষেত্র নির্ণয়, মূলধন এবং লভ্যাংশ ফেরত সংবলিত শর্তসহ বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন এক্ষেত্রে সহায়ক হবে। বহির্বিশ্বে কৃষি ব্যবস্থাপনায় ভিন্নতা রয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দেশে আর্থিক, সামাজিক ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, সামাজিক রীতিনীতি ও অন্য ব্যবস্থাপনায় ভিন্নতা এবং বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার নিরিখে বিনিয়োগ বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বহির্বিশ্বে কৃষি বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here