জাহাজে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। লম্বা চিমনিও রাঙানো লাল-সবুজে। প্রায় ১৮৫ মিটার লম্বা জাহাজটি সাগর থেকে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় এনে জেটিতে ভিড়ানো হয়। প্রায় এক দশক পর দেশীয় মালিকানাধীন সমুদ্রগামী কনটেইনার জাহাজ ভিড়ানোর এমন দৃশ্যের সাক্ষী হলেন উপস্থিত সবাই। কনটেইনার পরিবহনকারী জাহাজটির নাম ‘সারেরা’। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়েই এটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে আগামী মঙ্গলবার। কর্ণফুলী গ্রুপ যে দুটি জাহাজ কিনে দেশীয় পতাকা লাগিয়েছে, তারই একটি ‘সারেরা’। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরে কনটেইনার পরিবহন করবে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে দুটি বন্দরে যাবে জাহাজ দুটি। ফিরতি পথে নিয়ে আসবে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার। এই সেবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিস’। কর্ণফুলী গ্রুপের পরিচালক হামদান হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক দশক পর দেশের পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজের পথচলা শুরু হলো। উইনডো বার্থিং বা সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাবে। এতে রপ্তানিকারকেরাও বাড়তি সুবিধা পাবেন। এই সেবার মাধ্যমে কনটেইনার পরিবহন ভাড়া বাবদ বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনের বন্দরগুলোয় বিদেশি ২২টি প্রতিষ্ঠানের (ফিডার অপারেটর) ৮৪টি জাহাজ কনটেইনার পরিবহন করছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব জাহাজ গত বছর ২৯ লাখ কনটেইনার পরিবহন করেছে। কর্ণফুলী গ্রুপের জাহাজ দুটি বছরে এক লাখ কনটেইনার পরিবহন করতে পারবে। জাহাজটিতে কনটেইনার পরিবহনের জন্য বুকিং নেওয়া শুরু হয়েছে। আজ এবং কাল জাহাজটিতে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বোঝাই করা হবে। কর্ণফুলী গ্রুপের পরিচালক রাইমা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ দুটিতে সর্বোচ্চ মানের সেবা পাবেন গ্রাহকেরা।’ শিপিং ব্যবসায় কর্ণফুলী লিমিটেড দেশের প্রথম প্রজন্মের প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে হেদায়েত হোসেন চৌধুরীর হাত ধরে গ্রুপটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন হেদায়েত হোসেন চৌধুরীর ছেলে সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। বর্তমানে গ্রুপটি চারটি ফিডার অপারেটর কোম্পানি ও পাঁচটি মেইন লাইন অপারেটরের এজেন্সি পরিচালনার ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে। শিপিং ছাড়াও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোসহ লজিস্টিকস কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে গ্রুপটির। ফিডার অপারেটর হিসেবে এবারই প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে গ্রুপটি। এতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিটি। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনার ব্যবসা শুরু করেছিল দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান। এইচআরসির হাতে দশটি এবং কিউসির হাতে সাতটি জাহাজের মালিকানা ছিল। শিপিং বাণিজ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে এক দশক পর দেশীয় প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে ধীরে ধীরে পুরোটাই বিদেশিদের হাতে চলে যায় এ ব্যবসা। ২০০৭ সালে কিউসি এবং ২০১০ সালে এইচআরসি এ ব্যবসা থেকে পুরোপুরি সরে আসে। শিপিংবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আলপালাইনারের হিসাবে, শুধু কনটেইনার পরিবহন করে এমন জাহাজের সংখ্যা এখন বিশ্বে ৫ হাজার ৩৫৬। চট্টগ্রাম বন্দর রুটে যেসব জাহাজ চলাচল করছে, সেগুলো মাঝারি আকারের ফিডার জাহাজ হিসেবে পরিচিত। কনটেইনার পরিবহনে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজগুলো এসব ফিডার জাহাজের ধারণক্ষমতার ১২ থেকে ১৫ গুণ বড়। সীমাবদ্ধতার কারণে বড় আকারের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ানো যায় না। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আজমীর হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক দশক পরে হলেও দেশীয় পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজের সেবার সূচনা দেশের জন্য গর্বের। এতে বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আবার পণ্য পরিবহন বাবদ বিদেশি মুদ্রা আয় হবে। কর্মসংস্থানও হবে দেশীয় নাবিকদের।
Recent Article
The Legacy of Faizi Tea Estate: A Heritage Rooted in Passion, Purpose and Leadership
Nestled in the lush, green landscapes of Moulvibazar, in the heart of Bangladesh, lies the Faizi Tea Estate—a name synonymous with heritage,...
বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছে ৮৬ শতাংশ
করোনার ধাক্কায় দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয়...
হঠাত্ নগদ ডলারের সংকট, কমে যাচ্ছে টাকার মান
বাজারে চাহিদা ও জোগানের ব্যবধানে ডলারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে বাড়ছে ডলারের দাম। আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। আর এর...
Bangladesh now a model for effective disaster management: PM
Prime Minister Sheikh Hasina today said Bangladesh is now a model country in the world in disaster management as it has been...
Automotive industry could attract Japanese investment: DCCI president
The automotive industry in Bangladesh could be an emerging investment destination for Japanese entrepreneurs, said Dhaka Chamber of Commerce and Industry president...