দেশে ভালো ব্যবসায়ী হওয়া ভালো না : এমসিসিআই সভাপতি

0
389

নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা তুলে নেয়ার সমালোচনা করে মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির বলেছেন, মনে হচ্ছে দেশে ভলো ব্যবসায়ী হওয়া ভালো নয়।

এ সময় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সাড়ে তিনশ কোম্পানির মধ্যে দুইশর অধিক কার্যকর কোম্পানি নয় বলেও মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীদের বনেদি এ সংগঠনটির সভাপতি। এ কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার না কমিয়ে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানো সঠিক হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার (২০ জুন) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সিপিডি বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

নিহাদ কবির বলেন, কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে আমরা তার বিপক্ষে। এটা ভালো করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। গতকাল আর একটা খবর দেখে মনে হলো দেশে ভালো ব্যবসায়ী হওয়া ভালো নয়। শুধু এই সুযোগটা (কালো টাকা সাদা করা) দেয়া হয়েছে সেটা নয়, যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের ১০ শতাংশ রেয়াতে একটা সুবিধা দেয়া হয়েছিল, সেটাও বাংলাদেশ ব্যাংক তুলে নিয়েছে।

‘ভালোভাবে ব্যবসা করার ইনসেনটিভ সরিয়ে নিয়ে, এই ইনসেনটিভগুলো (কালো টাকা সাদা করা) আনা হয়, তাহলে এটাকে আমরা নেতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছি। এর আগে এটাও দেখেছি ব্ল্যাক মানি হোয়াইট সেরকম পরিমাণে তো হয়নি, কস্ট বেনিফিট অ্যানালাইসিস করলে লস আমাদের হয়েছে। কারণ দেশের যে রেপুটেশনের রিস্কটা হয়েছে, যে আমাদের অ্যাকাউন্টিং চর্চা এবং ব্যবসা বিজনেস প্রাক্টিস আর নট ট্রান্সপারেন্ট অ্যান্ড আর নট ফেয়ার। এমসিসিআইর পক্ষ থেকে এ পদক্ষেপটা আমরা কিছুতেই সমর্থন করতে পারি না’- বলেন এমসিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, কর্পোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৩২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, সেটা ভালো উদ্যোগ। এটা আমাদের বহুদিনের দাবির ফল। আমরা আশাকরি এটা ধারাবাহিকভাবে আরও কমে আসবে। তবে এ ট্যাক্স রেট কমানোর কারণে যে বেনিফিট আমাদের পাওয়ার কথা ছিল, সেই বেনিফিট আমরা পাবো না।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, উৎস অগ্রিম কর অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ নেয়া হয়। অধিকাংশ কোম্পানিই বছর শেষে যখন হিসাব করে, দেখা যায় তর প্রকৃত কর দায় ওই ৫ শতাংশের সমান হয় না। এখানে একটা ট্যাক্স ক্রেডিট জমা হয়। কোনো দিনই আমরা ট্যাক্স রিফান্ড পায় না।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার না কমিয়ে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানো সঠিক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানোর ফলে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান কমে সাড়ে সাত শতাংশ হয়েছে। এখানে দুটি বিষয় আছে। একটা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খুবই কম। সাড়ে তিনশর মতো কোম্পানি আছে, সেখানে দুইশর অধিক সঠিকভাবে কার্যকর কোম্পানি নয়। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে ৮০-৯০ হাজার কোম্পানি অতালিকাভুক্ত। কাজেই অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানোটা এবার সঠিক পদক্ষেপ হয়েছে।

তিনি বলেন, যে শেয়ারবাজারে ফান্ডামেন্টালি ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম কমে যায় এবং অকার্যকর কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে সিস্টেমিক কারণে, সেই শেয়ার মার্কেটে শুধুমাত্র ট্যাক্স ব্যবধান বাড়িয়ে ভালো কোম্পানিকে আনা যাবে না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার এসেছেন। তাদেরকে যদি ফ্রি হ্যান্ড দেয়া হয়, সর্ট টার্মে স্মল ইনভেস্টরদের কিছুটা প্রটেকশন দিয়ে ফান্ডামেন্টালি শেয়ারবাজারের যে দুর্বলতা রয়েছে তা দূর করার জন্য, তাহলে হয় তো শেয়ারবাজারের উন্নতি হবে এবং ব্যাংক খাতের ওপর থেকে চাপ কমবে।

এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমালোচনা করে নিহাদ কবির বলেন, আমরা প্রতিবছরই দেখি এনবিআরকে একটা টার্গেট দেয়া হয়। পরবর্তীতে রিভাইজ (সংশোধিত) বাজেটে তা কমানো হয়। কিন্তু এনবিআর যে ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন দরকার, সেগুলো কোনো একটা কারণে আমরা কিছুতেই করে উঠতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যখনই তাদের টার্গেট পূরণ না হয়, তখনই যারা ভালো কারদাতা তাদের ওপর চাপটা পড়ে। যারা কর দিতে পারেন, যারা কর দেয়ার যোগ্য তাদের ব্যাপারে কোনো কিছু করা হয় না। একটা বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে যে পরিমাণ রিসার্চ প্রয়োজন, এনবিআরের ভেতরে সেই রিসার্চ ক্যাপাসিটিটা এখনো গড়ে উঠেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here