করোনার সময়ে আশা জোগাচ্ছে রেমিট্যান্স

0
337

মহামারি করোনাভাইরাসের এ সংকটময় সময়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি জোগাচ্ছে প্রবাসীদের কষ্টের অর্থ রেমিট্যান্স। ঈদ সামনে রেখে দেশে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।

চলতি মে মাসের প্রথম ১৪ দিনে মহামারির মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)। যা গত বছরের একই সময়ের প্রায় সমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স আহরণের প্রধান দেশগুলো করোনার প্রাদুর্ভাবে গত তিনমাস ধরে অচলাবস্থা। কাজ নেই, অনেকে ঘর থেকেও বের হতে পারছেন না। বেশিরভাগ দেশে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা চাইলেও দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেননি। যার কারণে গত দুইমাস রেমিট্যান্সের প্রভাব কমেছে। তবে আস্তে আস্তে এখন বিশ্বপরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। অচলাবস্থা অনেক দেশে স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হতে শুরু করেছে। তাই ঈদের সামনে আবারও রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করেছেন প্রবাসীরা। প্রতি বছরই ঈদের আগে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। গত বছরে ঈদের আগে মে মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই সময়ে মে’র প্রথম ১৪ দিনে পাঠিয়েছিলেন ৮৭১ মিলিয়ন ডলার বা ৮৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ে আগের মাস এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। যা গত ৩০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে পাঠানো রেমিট্যান্স আগের বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৩৫ কোটি ডলার বা ২৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

এপ্রিলের আগের মাস মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।

এদিকে রেমিট্যান্সে সরকারঘোষিত দুই শতাংশ প্রণোদনা প্রবাসীরা সহজে যেন পান সে জন্য বেশকিছু শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রণোদনায় কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগত না। এর আওতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সে বিনাশর্তে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনার অর্থ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। এতদিন প্রণোদনা পেতে হলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রাপক উত্তোলনের ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হতো। এখন তা বাড়িয়ে দুই মাস করা হয়েছে।

জানা গেছে, এতদিন দেড় লাখ টাকার নিচে পাঠানো অর্থের বিপরীতে রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য কোনো কাগজপত্র লাগত না। তবে দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতার দেয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হতো। এছাড়া রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে তাকে ব্যবসার লাইসেন্সের ফটোকপি দিতে হতো।

হকেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। যা অর্থবছরের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়া ও বিভিন্ন সংস্থার ঋণের কারণে রপ্তানি মন্দার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রোববার (১৭ মে) পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here