আগামী অর্থবছরের বাজেটে (২০২০-২০২১) করোনার ধাক্কায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ছে ১১টি খাতে এবং কমছে ছয়টিতে। মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় ১৭টি খাতে মোট বরাদ্দ বিভাজনের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়া খাতগুলো হল- স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ, পরিবহন, যোগাযোগ, শিক্ষা ও ধর্ম, গণসংযোগ, সমাজকল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাত। এসব খাতে বাড়ছে ২১ হাজার ৫৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
আর বরাদ্দ কমে যাওয়া খাতগুলো হচ্ছে- জনপ্রশাসন, ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি,পানিসম্পদ, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান এবং তৈল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাত। এসব খাতে কমছে তিন হাজার ৮০৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগামী ১৯ মে (সম্ভাব্য) অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এসব বরাদ্দ অনুমোদন হওয়ার কথা। কোভিড-১৯ এর কারণে এবার অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভা শেষে যুগান্তরকে জানান, করোনা বিবেচনায় এবার অনেক কিছুই চিন্তা-ভাবনা করতে হয়েছে। আমাদের কতগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তো আছেই। যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ, পরিবহন ও অবকাঠামো খাতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া করোনার কারণে স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
সেই সঙ্গে কৃষি আমাদের মৌলিক খাত। এবার আপদের সময় কৃষি খাত খুবই শক্ত ভূমিকা রেখেছে। ফলে আগামীতে কৃষিতে বরাদ্দ বাড়ছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে, উপকরণ সরবরাহ, সার, বীজ, গুদামে সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থা সুসংহত করতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন খাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে পাঁচ হাজার ১৩৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে চার হাজার ৮৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফলে তুলনামূলক বরাদ্দ কমছে এক হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
পানি সম্পদ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ছয় হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ফলে কমছে এক হাজার ২৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এছাড়া ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২৬ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কমছে এক হাজার ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫৮৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগামী বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে ৫১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
কমছে ৬৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৫ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে ১৫ হাজার ৫৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ খাতে কমছে ২২৩ কোটি টাকা। এছাড়া তৈল,গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
ফলে বরাদ্দ কমছে ৫৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, এটি অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বসে ঠিক করেছে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে খাতভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে করোনার কারণে কমেছে কিনা সেটি বলতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামী ১৯ মে মঙ্গলবার আশা করছি এনইসি বৈঠকে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হতে পারে। তারিখ চাওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে পরিবহন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সংশোধিত এডিপির তুলনায় এ খাতে বাড়ছে চার হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য,পুষ্টি, জনংসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১৩ হাজার ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। করোনা বিবেচনায় এ খাতে বাড়ছে দুই হাজার ৯২৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে আট হাজার ৩৮২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ খাতে বাড়ছে এক হাজার ৭৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। শিল্প খাতে বরাদ্দ হচ্ছে তিন হাজার ৭৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, বাড়ছে ৫১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ খাত বরাদ্দ পাচ্ছে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, বৃদ্ধি পাচ্ছে এক হাজার ১৭২ কোটি টাকা। যোগাযোগ খাত পাচ্ছে দুই হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা,বাড়ছে ৮৩৪ কোটি টাকা। শিক্ষা ও ধর্ম খাত পাচ্ছে ২৩ হাজার ৩৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, বাড়ছে দুই হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। গণসংযোগ খাত পাচ্ছে ২৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, বাড়ছে ৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন খাত পাচ্ছে ৯৩০ কোটি টাকা, বাড়ছে ১৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত পাচ্ছে ১৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা, বাড়ছে এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫৭৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।