NewIncredible offer for our exclusive subscribers!Read More
Bangladesh Business Economy

করোনায় বিশ্বব্যাপী ওলটপালট অর্থনীতি

  • April 30, 2020
  • 1 min read
করোনায় বিশ্বব্যাপী ওলটপালট অর্থনীতি

স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে থাকা অর্থনীতি করোনা ভাইরাসের থাবায় রাতারাতি ওলটপালট হয়ে গেল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আর দেখেনি। অর্থনীতি এত বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে তা হয়তো কারো ভাবনায় ছিল না। রীতিমতো স্তব্ধ বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। একের পর এক কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে ছোটো-বড়ো সব প্রতিষ্ঠানে।

প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, কেউই নিস্তার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩ কোটি মানুষ বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভাইরাসের ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতির এত বিপর্যয় আর শ্রমিকের বেঘোরো চাকরি হারানোর ঘটনা আর ঘটেনি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, বিশ্ববাজারে শ্রম পরিস্থিতি তাদের ভাবনার চেয়েও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি পাঁচ জন শ্রমিকের চার জনই এখন কর্মহীন।

এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালন হচ্ছে মে দিবস। দিনটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের গৌরবোজ্জ্বল দিন হিসেবে পরিচিত। অথচ এবার দিনটি এলো বড়ো অসময়ে, শ্রমিকের কর্মহীন হওয়ার সংবাদের মধ্য দিয়ে।

অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, দিনটি শ্রমিকের অর্জনের হলেও এবার অর্জন নেই-ই বরং তার আয়ের পথ কেড়ে নিয়েছে করোনা ভাইরাস। একসঙ্গে এত মানুষের বেকার হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে কোনো দিনও হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিক কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি।

আইএলওর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী শ্রমের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ৩৩০ কোটি। এর মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে যুক্ত ২০০ কোটি। এই শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ১৬০ কোটিই জীবিকার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সুড়ঙ্গের ওপাশে এখনো আলোর সন্ধান মিলছে না।

বাংলাদেশে শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশের বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে জড়িত। করোনা ভাইরাসের ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লেগেছে এই খাতে। ফলে একের পর এক কর্মহীন মানুষের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে তারা। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও লে-অফ (সাময়িক বন্ধ), কর্মী ছাঁটাই চলছে। অর্থনীতিকে জাগিয়ে রাখতে সরকারও বিভিন্ন খাতে সাধ্যমতো প্রণোদনার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। তবুও বেকার হওয়ার মিছিল বাড়ছেই।

আইএলও জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পুরোপুরি কিংবা আংশিক লকডাউনের কারণে বৈশ্বিক শ্রমশক্তির ৮১ শতাংশই এখন কর্মহীন বা বেকার। অর্থাত্ প্রতি পাঁচ জন শ্রমিকের মধ্যে চার জনের বেশি এখন কর্মহীন। এ পরিস্থিতিতে শিল্পোত্পাদন, খাদ্যসেবা, খুচরা ব্যবসা, আবাসন এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। দেশেও দীর্ঘ এক মাস ছুটিতে (অঘোষিত লকডাউন) থাকার পর জীবিকার তাগিদে সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে।

ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, এই ধাক্কায় ছোটোখাটো অনেক প্রতিষ্ঠান ঝরে যাবে। কর্মহীন হওয়াসহ সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সরকারের খাদ্য প্রদান কর্মসূচির বদলে মানুষের হাতে নগদ টাকা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের ব্যবস্থাপনায় খাদ্যশস্য কেনা এবং প্রকৃত উপকারভোগীর হাতে পৌঁছানো সময় সাপেক্ষ। এতে দুর্নীতি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এর বদলে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তাদের মোবাইল ব্যাংক হিসাব খুলে সেখানে সরাসরি সরকারি টাকা দেওয়া যেতে পারে।

শ্রমিকের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জীবিকার প্রশ্নও সামনে এসেছে। তবে এর মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত পরিসরে চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সীমিত পরিসরে কারখানা খুলেছে।

শ্রমিকনেত্রী ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ইত্তেফাককে বলেন, একদিকে মুনাফার চাপে শ্রমিকদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, ছাঁটাই ও লে-অফ হচ্ছে। সব ধরনের ছাঁটাই ও লে-অফ নিষিদ্ধ, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, রেশনিং, বাসস্থান, অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক শ্রম আইন বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে শ্রম আইনের ৩২৪ ধারা অনুসরণ করে মহামারিকালে ছয় মাস সব লে-অফ, ছাঁটাই, চাকরিচ্যুতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানান।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, বিশ্বব্যাপী নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল থাবা আঘাত এনেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল শ্রমজীবী মানুষ পেতে শুরু করেছেন।

মে দিবসে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি স্থগিত, পালন করবে কিছু সংগঠন

করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে এবারের মে দিবসের সব কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পক্ষ থেকে র্যালি এবং সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও এবার কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

তবে এক বিবৃতিতে শ্রম ও কর্মংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, বৈশ্বিক এ মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মালিকপক্ষকে কারখানা খোলা রাখতে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। অবশ্য কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন সামাজিক দূরত্ব মেনে আজ শুক্রবার তাদের কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে।

About Author

Business Bangladesh

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.