বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ভালো চললেও সামনের দিনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিষণ্নতা তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারের কর ও রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হতে পারে। দ্য ডেইলি অবজারভার ও ডিবিসি নিউজের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন চলছে’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে দীর্ঘমেয়াদি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও মানবসম্পদ তৈরিতেও প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কাজ করতে দেয়া, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় পরিবারের কর্তৃত্ব কমানো, পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করা এবং প্রবৃদ্ধিকে আরো টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চ্যালেঞ্জগুলোকে আমাদের সুযোগ হিসেবে নিতে হবে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ বের করতে হবে। আমি আপনাদের কাছ থেকে সুচিন্তিত মতামত নিয়েই পদক্ষেপ নেব। আপনাদের সৃজনশীল মতামতগুলো আমার পদক্ষেপ গ্রহণে সহযোগিতা করবে। আমি খালি হাতে আরম্ভ করেছি। আমাকে একটু সময় দিলে অবশ্যই আপনাদের ও দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রফতানি সারা বিশ্বেই কমছে, ফলে সেটি থেকে আমরা বের হতে পারব না। আবার আমদানিনির্ভরতা থাকায় মুদ্রা অবমূল্যায়ন যৌক্তিক হবে না। সরকার কোনো ব্যবসা করবে না, ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ করে দেবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। কর্মসংস্থান করতে না পারলে বড় হয়ে কোনো লাভ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম বলেন, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় পরিবারনির্ভরতা কমানো দরকার।
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিল্প খাতে বেশ ধাক্কা আসতে পারে। এজন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, দেশের ওভেন খাতের কাঁচামালের সিংহভাগই আসে চীন থেকে। ডায়িং খাতের বড় অংশ আসে চীন থেকে। ফলে সামনের দিনে পরিস্থিতি খারাপ হলে বিপদ ঘনীভূত হতে পারে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি আলোচনা প্রয়োজন। এটি দ্রুত সময়ের মধ্যেই করতে হবে।
সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, চার গুণের বেশি বাজেট বেড়েছে। কিন্তু সে হারে জনবল বাড়ানো হয়নি। ফলে দক্ষতার কারণেই বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। বৈষম্য নিয়েও চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ ধনীরা একটু ধনী হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের উন্নতি হচ্ছে। অর্থনীতির অনেক ডাউন সাইড থাকলেও সেগুলো থেকে সরকার বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এছাড়া নীতিনির্ধারকদের একটি দ্বৈধতার মধ্যে থাকতে হয়। তবে দুঃখের বিষয়, এক পক্ষ সুবিধা পেলে তারা চুপ থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালো চলছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমরা যেন মধ্যম আয়ের ফাঁদে না পড়ি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গতকালের অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, কমিউনিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, আহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম শহিদুল আহসান, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।