পোশাক শিল্পের বিকল্প হতে পারে কাজুবাদাম ও কফি। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এক সাথে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আয়ে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলায় দুই হাজার কফি ও কাজুবাদামের বাগান করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিন মন্ত্রী মিলিত হন।
বৈঠকের শুরুতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ডেইলপাড়ায় দেশের প্রথম কাজুবাদামের কারখানা ‘গ্রিনগ্রেইন কেশিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি’ গড়ে তোলা তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ তিন মন্ত্রীকে এ সম্পর্কে অবগত করে বলেন, ‘১০ বছর আগে ২০১০ সালে পাহাড়ের কাঁচা কাজুবাদাম প্রসেসিং থেকে শুরু করে কারখানা নির্মাণ করে সাফল্য পেয়েছি। গত রোববার দুবাইয়ে সাড়ে তিন হাজার কেজি কাজুবাদাম রপ্তানি করেছি। যার বাজারমূল্য ২৩ হাজার ডলারের বেশি।’
সাফল্যের গল্প শোনানোর পাশাপাশি রপ্তানি ও উৎপাদন কাজের কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন শাকিল।
শাকিলকে আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কাজুবাদাম রপ্তানি উৎপাদন কাজ এগিয়ে নিতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। আমার বিশ্বাস, কিছুটা সুবিধা দিলে কাজুবাদাম ব্যাপক সম্ভাবনাময় কৃষি রপ্তানি পণ্য হবে।’
বৈঠক শেষে কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এর মাধ্যমে পাহাড়ের দুই হাজার পরিবার আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। আগ্রহী ও সংশ্লিষ্ট কৃষককে কফি ও কাজুবাদাম উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত কাজুবাদাম বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। কফি ও কাজুবাদামের চারা বিএডিসি, হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে সরবরাহ করা হবে।’
কৃষিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট ৩৫ লাখ মেট্রিকটন কাজু বাদাম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১২ লাখ উৎপাদিত হয় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, ঘানা ও বেনিনে। তবে এসব দেশ কাজুবাদাম প্রসেসিং করতে পারে না। আফ্রিকার দেশগুলো মাত্র ১০ শতাংশ প্রসেসিং করে। এদের কাজু বাদাম ভিয়েতনাম প্রসেসিং করে বছরে চার বিলিয়ন ডলার আয় করছে।
তিনি আরো জানান, সারাবিশ্বে কাজুবাদামের বাজার ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই চার বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। বাকিগুলো ভারত ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশ রপ্তানি করে। কাজুবাদামের বড় মার্কেট যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।
আগ্রহী ও সংশ্লিষ্ট কৃষককে কফি ও কাজুবাদাম উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ কাজুবাদামে বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত কাজুবাদাম বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে বলে জানান মন্ত্রী।
কাজুবাদাম চাষ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামেও কফি-কাজুবাদাম চাষ করা হবে। এর চাষ পদ্ধতি শেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কৃষকদের ভিয়েতনামে পাঠানো হবে। কফি ও কাজুবাদামের চাষ এগিয়ে নিতে বিনামূল্যে চারা বিতরণ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণে ভিন্নতা এসেছে। শুধু পোশাক শিল্প নিয়ে থাকলে হবে না। আমাদের ভিন্ন ভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতে হবে। পোশাকের বিকল্প হতে পারে কাজুবাদাম। এক সময় ভিয়েতনামে কাজুবাদাম চাষই হতো না।’
কাজুবাদাম প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘কাজুবাদামে ভালো সম্ভাবনা। আমার কাছে এই বিষয়ে প্রকল্প আসলে অনুমোদনের ব্যবস্থা নেব। যাতে করে পাহাড়ে এর চাষ সম্প্রসারণ করা যায়।’