উচ্চ সুদে খেলাপি বাড়ল ২৫ ভাগ

0
298

শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। গত এক বছরে এ খাতে খেলাপি বেড়েছে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে এটা ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপি হয়েছে ৫৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সম্প্রতি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, একদিকে উচ্চ সুদ অন্যদিকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। দুই ধরনের সুদে নাকাল ব্যবসায়ীরা। ফলে দিনের পর দিন শিল্প খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

তাদের মতে, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে সিঙ্গেল ডিজিটের বিকল্প নেই। সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করতে হলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সাজসজ্জা বাবদ খরচ কমাতে হবে। একই সঙ্গে উচ্চ মুনাফা থেকেও সরে আসতে হবে।

বিষয়টি একটি বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক স্বীকারও করেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে দেশে যত ব্যবসা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ব্যাংক ব্যবসা। বেশিরভাগ ব্যাংকই বছর শেষে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এ ক্ষেত্রে কিছুটা কম মুনাফা করলে সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র শামিল। কারণ এমনিতে উচ্চ সুদ আবার সুদের ওপর সুদ কাটলে কীভাবে ব্যবসা করব।

১২, ১৩ ও ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারবেন না। সে কারণে অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন। দীর্ঘদিন লোকসানে থেকে অনেকের কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোকে শুধু লাভের চিন্তা করলে হবে না। আগে ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

তা না হলে লাভ তো দূরে থাক, মূল টাকাও ফেরত পাবে না। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা যেন এবার কার্যকর হয়।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো চলছে না।

এ ছাড়া ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদও এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেহেতু ব্যবসা ভালো হচ্ছে না, সেহেতু উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে অনেকে পরিশোধ করতে পারছেন না।

বিশ্বের কোথাও এত সুদে ঋণ দেয়া হয় না। এর বাইরে একটা শ্রেণি আছে, যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। তবে যারা ব্যবসায় লোকসানের কারণে খেলাপি হয়েছে তাদের হিসাব ভিন্ন। অন্য একটা শ্রেণি আছে, যারা বড় ঋণখেলাপি; তবে তাদের খেলাপির তথ্য প্রকাশ পায় না। নানাভাবে লুকিয়ে রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে- ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের খুঁজে বের করা। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে জানা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে শিল্প খাতে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে শিল্প ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এ সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৬৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। আর বকেয়া স্থিতি আলোচ্য সময়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৭৯ কোটি টাকা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, উল্লিখিত সময়ে মেয়াদি শিল্প ঋণে খেলাপি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং চলতি মূলধন ঋণে খেলাপি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

Source – Jugantor

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here