এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে

0
259

বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাণিজ্য সুবিধাসহ অনেক খাতেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোবাবিলায় এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং তা সমন্বিতভাবে এড়াতে হবে। শুধু রপ্তানি বহুমুখীকরণ নয়, কর্মসংস্থান, দক্ষতার উন্নয়নসহ বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

গতকাল বুধবার শুরু হওয়া বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০২০ এর বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং বাণিজ্য সহায়তা শীর্ষক সেশনে বক্তারা এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম। মূল উপস্থাপনা পেশ করেন বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, ইউএসএইড-এর ইকোনমিক গ্রোথ অফিসের পরিচালক জন স্মিথ, বিশ্বব্যাংকের পোগ্রাম লিডার ইউতাকা ইউশিনো এবং বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট রুবানা হক। দুই দিনব্যাপী বিডিএফের প্রথম দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিভিন্ন সেশনে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

শেখ ফজলে ফাহিম তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, বেসরকারি খাত শুধু ব্যবসাই করে না, এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও তৈরি করেন। এসডিজি অর্জনের জন্য বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে। ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ, উত্পাদনশীলতা বাড়ানো, দক্ষতা, পর্যাপ্ত অবকাঠামো, বাণিজ্য সুবিধাসহ সমন্বিতভাবে এগোতে হবে।

বিডা চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেরসরকারি বিনিয়োগ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে আটকে আছে যা প্রতিযোগী অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে সেটি মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে এগোতে হবে। বাণিজ্যের অবকাঠামো উন্নতি করার পাশাপাশি দক্ষজনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।

বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, সবার আগে আমদের ‘মাইন্ড সেট’ পরিবর্তন করতে হবে। বিনিয়োগ পরিবশে উন্নত করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্রের জটিলতা কমাতে হবে। ইউএসএইড প্রতিনিধি জন স্মিথ বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু পুষ্টিসহ আর্থ-সামাজিক খাতে অনেক উন্নতি করেছে। এর পেছনে বেসরকারি খাতের বড়ো অংশগ্রহণ রয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ অনেক সম্ভাবনাময়। এর পরেও এদেশে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দরিদ্র্র্য রয়েছে, যাদের আয় দৈনিক ১৬৫ টাকার কম। পকেট দারিদ্র্য দূরীকরণে উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এক গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এদেশে তৈরি পোশাক শিল্প ছাড়াও চামড়া শিল্প, হালকা প্রকৌশল, পর্যটন, তথ্য প্রযুক্তিসহ ১৬ খাত চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে বড়ো কর্মসংস্থান সম্ভব। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে পিছিয়ে পড়দের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দুর্নীতি কমানোসহ ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ইউতাকা ইউশিনো বলেন, ব্যবসার খরচ কমিয়ে আনতে হবে। এদেশে আমদানি-রপ্তানির খরচ অনেক বেশি। তাছাড়া বাণিজ্যে সময়ও অন্য দেশের তুলনায় বেশি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাণিজ্যের খরচ কমিয়ে আনতে হবে এবং বন্দর সক্ষমতাসহ দক্ষতার উন্নতি করতে হবে।

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক বলেন, আমরা শুধু পণ্যের বহুমুখীকরণের কথা বলি, কিন্তু এর পাশাপাশি পদ্ধতি, উত্পাদন ও দক্ষতাও বাড়াতে হবে। ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে। সেসময় বাণিজ্য সুবিধাও কমে যাবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি সমন্বিতভাবে করতে হবে।

Source – The Ittefaq.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here