টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। এজন্য উপজেলা পর্যায়ে ‘৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। এটি বাস্তবায়িত হলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি একটি করে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভূক্তির প্রয়োজনীয় সুবিধা সৃষ্টি করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স চালু করার মাধ্যমে দেশব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা হবে। কর্মক্ষম যুবকদের দেশে ও বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাকরি বাজারের চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তোলা এবং ৪টি ট্রেড ও ৪টি স্বল্পমেয়াদী প্যারাট্রেড কোর্স চালু হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পের প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুর্নগঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) গুরুত্বপূর্ণ পালন করছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কারিগরি শিক্ষাকে গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ বিদ্যমান ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এখন দেশের অবশিষ্ট ৩২৯টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা যায়, ৩৮৯টি উপজেলায় টিএসসি স্থাপনের জন্য মোট ১৮ হাজার ৫০১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হলে এর ওপর ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পিডব্লিউডির ২০১৮ সালের রেট শিডিউল মোতাবেক ২০ হাজার ৮৮৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। পরবর্তীতে প্রস্তাবিত ৩৮৯টি উপজেলার মধ্যে ৬৩টি উপজেলায় এরমধ্যে টিএসসি বিদ্যমান রয়েছে তাই দ্বৈততা পরিহারের জন্য এই প্রকল্প থেকে ওই ৬৩টি উপজেলাকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট উপজেলা এবং বাংলাদেশের নবসৃষ্ট যেসব উপজেলায় কোনো টিএসসি নেই বা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়নি সেখানে টিএসসি স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে করে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি করে টিএসসি বিদ্যমান থাকবে।
এসব কারণে পুনরায় ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পিইসি সভার সিদ্ধান্তে ৩২৯টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য মোট ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৯৮৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, একাডেমিক কাম ওয়ার্কসপ ও প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষক ডরমিটরি, ছাত্রী নিবাস, বাউন্ডারী ওয়াল, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, গভীর নলকূপ, ৫০০ কেভিএ সাব-স্টেশন, শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধা মনুমেন্ট এবং পানি সংরক্ষণাগার ইত্যাদি করা হবে।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘দেশে-বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাকরি বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মক্ষম যুবকদের দক্ষ ও যোগ্য মানবস্পদে পরিণত করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমের শুরু এবং প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংক্যক নতুন শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
Source – Sara Bangla