পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ চাইছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

0
221

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়ানোর নীতি থেকে সরে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানো হবে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ওপরই ভরসা করা হচ্ছে। কেবল ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই এ তহবিলের যোগান দেয়া হবে। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এ দিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতৃবৃন্দ আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সাথে বৈঠক করবেন। বৈঠকে পুঁজিবাজারে তহবিল বাড়ানোর সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল যোগান দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রস্তাবের বিষয়ে গভর্নরের সাথে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো চলমান অবস্থায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ পাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের মনোভাব জানিয়ে দেয়। এর পর থেকেই বিকল্প অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যেহেতু ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না, এ কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিকল্প হিসেবে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজসহ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাট্টুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এ ঋণ প্রদান করা হবে না। এজন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। যাদের ঋণ ফেরতের সÿমতা রয়েছে কেবল তাদেরই ঋণ দেয়া হবে। ঋণ পাওয়ার জন্য একটি মানদণ্ড নির্ণয় করা হবে। ওই মানদণ্ডে যারাই পড়বে তাদেরই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিলের যোগান দেয়া হবে।

ডিএসই ও সিএসইর তালিকাভুক্ত এমন প্রায় আড়াই শ’ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ আছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর ৩৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ রয়েছে। অপর দিকে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ৬৩টি।

এ বিষয়ে বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থায় যেকোনো উপায়ে তহবিলের যোগান দিতে হবে এটাই বাস্তবতা। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়ে গেছে। নতুন করে তাদের বিনিয়োগ করার মতো সক্ষমতা নেই। এ কারণে তাদের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব নিয়েই মূলত আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠক করা হবে।

প্রসঙ্গত, ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে রেপোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অর্থের সংস্থান করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তহবিল পেতে আবেদনের সময় দেয়া হয়েছিল তিন মাস। গত ৩১ ডিসেম্বর এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে একমাত্র সিটি ব্যাংক ৫০ কোটি টাকার তহবিল নিয়েছে। আর কোনো ব্যাংক সাড়া দেয়নি। এ দিকে অব্যাহত পতনের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে। কিন্তু ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখায়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিকল্প অর্থায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ দিকে আগামীকাল সোমবার পুুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

Source – Nayadiganta.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here