ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন না হলে প্রবৃদ্ধি কমবে: গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য

0
300

শতবছরমেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন না হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমবে। বছরে এক দশমিক তিন শতাংশ হারে জিডিপি কমে যাবে। অপরদিকে পরিকল্পনাটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিবছর এক দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাসেসমেন্ট ফর দ্য বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০: অ্যানালাইসিস অব সিলেক্টেড ইন্টারভেনশন’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিনুল রেজা চৌধুরী। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মনসুর রহমান। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী, শামীমা নার্গিস, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ড. এমএ কাশেমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে ডেল্টা প্ল্যান সঠিক বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য সমন্বিত উন্নয়ন মডেল গ্রহণ করতে হবে। এতে আরও বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধগুলো চার মিটার উঁচু করে নির্মিত হলেও সংস্কারের অভাবে দুই থেকে আড়াই মিটার উঁচু রয়েছে। এসব বাঁধ অন্তত ছয় মিটার উঁচু করে সংস্কার করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করতে হলে বনায়নের মাধ্যমে সি-ওয়াল তৈরি করতে হবে। এতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। যে কোনোভাবে হোক

সবুজ বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। এছাড়া খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের জন্য বাঁধ সংস্কারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় স্লুইস গেট তৈরি করতে হবে। নীতি ও বিজ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু সমন্বিত বাস্তবায়ন মডেল উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ড. শামসুল আলম বলেন, এটি একটি চলমান গবেষণা।

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন না হলে ২০২৭ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সংরক্ষণের অভাবে দেশের ১৩৯টি বাঁধ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব বাঁধ সংরক্ষণ করা হলে বন্যা ও উপকূলীয় অঞ্চলকে লবণাক্ততা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।

পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, আমরা যেভাবে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা নিয়েছি, তা সোভিয়েত ইউনিয়নও করতে পারেনি। যে পরিকল্পনাই নেয়া হোক না কেন, তার মূলে রয়েছে দেশের উন্নয়ন। শতবছরমেয়াদি এ পরিকল্পনা একটি আমব্রেলা প্রকল্প। এডিপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাই এডিপির সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা আবেগের বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীও সব সময় বলেন, চলুন নিজের কাজটা নিজেই করি। আমাদের নিজের মেধার ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

জামিনুল রেজা চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় বাঁধ সংস্কারের বিকল্প নেই। যদিও ব্যয়বহুল বিষয়। এরপরও এর বিকল্প কিছু নেই। সুন্দরবন রক্ষা করতে হবে। এতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সাইক্লোন শেল্টার মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন হওয়ায় অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা পাচ্ছে। মানুষের জীবন রক্ষায় এসব শেল্টারের সংস্কার জরুরি।

ড. শামসুল আলম বলেন, সমন্বিতভাবে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। এ পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২১টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১ হাজার ৫৬৪টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ২৪৬টি হলো ডেল্টা প্ল্যান সংশ্লিষ্ট।

এগুলোর অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে এডিপির শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্থ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ৮০টি প্রকল্পের মধ্যে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

সাহিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এসব প্রতিবেদন অনেক বেশি টেকনিক্যাল। তাই ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারবে। ড. এমএ কাশেম বলেন, কোস্টাল ওয়াল তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা বা ইকোসিস্টেম ঠিক থাকলে পেঁয়াজের দাম এত বাড়ত না। এজন্য ইকোসিস্টেম রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। ইলিশ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় এখন দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।

Source – Jugantor.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here