ব্যাংকিং লেনদেন কমে গেছে

0
410
Thin line flat design of internet banking transaction, secure money transfer using credit card, online financial business operations. Modern vector illustration concept, isolated on white background.

ব্যাংকিং চ্যানেলে ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে টাকা জমা, উত্তোলন ও খরচ। চেকের পাশাপাশি কার্ড, ইন্টারনেট, মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং—সব ধরনের মাধ্যমেই মাসভিত্তিক লেনদেন কমে আসছে। ২০১৯ সালের মে থেকে আগস্ট মাসের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। যদিও এ সময়ে সব ধরনের সেবার পরিধি বেড়েছে।

মাসভিত্তিক এ লেনদেনের হিসাব পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত ‘মাসিক অর্থনৈতিক গতিধারা বা মান্থলি ইকোনমিক ট্রেন্ড’ থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, লেনদেনের আনুষ্ঠানিক চ্যানেলকে এড়িয়ে চলছে অনেকে। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে নগদ লেনদেনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে অনেকে। এ কারণেই ব্যাংক খাতে লেনদেন কমছে।

ঠিক কী কারণে এমনটি হচ্ছে, তা জানা যায়নি। জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, কর কর্মকর্তাদের হয়রানির ভয়ে মানুষ এখন বৈধ চ্যানেলকে এড়িয়ে চলছে। দেশে যেসব অবৈধ লেনদেন হচ্ছে, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। কারণ, ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন হলে তার প্রমাণ থেকে যায়। ফলে নগদে অর্থ পরিবহন ও জমা অনেক বেড়ে গেছে। এ জন্যই মূলত ব্যাংকিং লেনদেন কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মে মাসে দেশের ব্যাংকগুলোর চেক ক্লিয়ারিং বা নিষ্পত্তি হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার। জুনে তা কমে হয় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। জুলাইয়ে তা বেড়ে ২ লাখ ২২ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা হলেও আগস্টে আবার কমে নেমে আসে ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। মূলত এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিলেই চেক নিষ্পত্তির প্রয়োজন হয়। 

গত বছরের মে মাসে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার হয়েছিল ১৮ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকার, জুনে তা কমে হয় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। জুলাইয়ে এ লেনদেন কিছুটা বেড়ে ১৬ হাজার ১৭৮ কোটি টাকায় উঠলেও আগস্টে নেমে আসে ১২ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকায়। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে মুহূর্তেই যেকোনো ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠানো যায়। এ জন্য কোনো চেকের প্রয়োজন হয় না।

টাকা লেনদেনের পাশাপাশি সব ধরনের কার্ডের ব্যবহারও কমে আসছে। গত মে মাসে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, জুনে তা কমে হয় ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। আর জুলাই ও আগস্টে কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ও ১৬ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। কার্ডের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনও অনেক কমে গেছে।

কার্ডের পাশাপাশি ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও ব্যাংকিং লেনদেন কমে গেছে। গত মে মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৬ হাজার ৯৮৯ কোটি, জুনে তা কমে হয় ৪ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। জুলাইয়ে তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৪২১ কোটি টাকায়। আর আগস্টে ইন্টারনেটে লেনদেনের পরিমাণ নেমে আসে ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকায়। 

বিকাশ, রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে মে মাসে লেনদেন হয় ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। জুনে তা কমে হয় ৩১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। জুলাইয়ে কিছুটা বেড়ে ৩৭ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা হলেও আগস্টে তা কমে নেমে আসে ৩৫ হাজার ৫১২ কোটি টাকায়। 

পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমেও লেনদেন কমেছে। মে মাসে লেনদেন হয়েছিল ১০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, জুনে তা কমে হয় ৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। আবার জুলাইয়ে ১১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা হলেও আগস্টে নেমে আসে ১০ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। 

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থনীতির গতি কিছুটা মন্থর হয়ে গেছে। ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমেছে। প্রবাসী আয় ছাড়া সব সূচকই খারাপ। এসব কারণে ব্যাংকিং লেনদেন কমে আসছে। কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যাংকিং লেনদেন বাড়তেই হবে।’ 

Source – Prothom Alo.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here