উৎপাদন ক্ষমতা হারাতে বসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল

0
1286

উৎপাদন ক্ষমতা হারাতে বসেছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো। সংশ্লিষ্টদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভাব, অব্যবস্থাপনা, সময়মতো কাঁচামাল কিনতে না পারা, উৎপাদনের কাজে অদক্ষ শ্রমিকের ব্যবহার ও দীর্ঘ ৬৮ বছরের পুরাতন মেশিনারিজ ব্যবহারের কারণে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে পাটকলগুলোকে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। যে কারণে মিলগুলো একদিকে যেমন সময়মতো শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি-বেতন দিতে পারছে না; অপরদিকে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জে বেসরকারি বাওয়া জুট মিলস লিমিটেড স্থাপনের মধ্য দিয়ে তত্কালীন ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইপিআইডিসি) যাত্রা শুরু করে। ধীরে ধীরে নতুন নতুন জুট মিল স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পাট শিল্পের বিকাশ ঘটে। লাভজনক হওয়ায় স্বাধীনতার পূর্বে দ্রুতগতিতে ৭৫টি জুট মিল স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশ অনুযায়ী জাতীয়করণকৃত জুট মিলসমূহ স্বনির্ভর ও লাভজনক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা এবং নিয়ন্ত্রণ, পরিদর্শন ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐ সময় বিজেএমসির জন্য ছয়টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেগুলো ছিল বিশ্ববাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা, স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে সর্বোত্কৃষ্ট মানের পাটজাত পণ্য উৎপাদন, শতভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কৃষকদের পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির বিষয়ে সহায়তা প্রদান, কৃত্রিম আঁশ ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারে উত্সাহিতকরণ এবং পাট ও পাটশিল্পের উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী নীতিনির্ধারণ এবং বাস্তবায়নে সরকারকে সুপারিশ করা। রাষ্ট্রায়ত্তকরণের শুরুর দিকে জুট মিলগুলো লাভজনক হলেও দু-এক বছরের মাথায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে লোকসানের কবলে পড়তে থাকে।

সূত্র জানায়, ১৯৮১ সালে বিজেএমসি নিয়ন্ত্রিত দেশে জুট মিলের সংখ্যা ছিল ৮২টি। তবে ১৯৮২ সালের পর এগুলোর মধ্যে ৩৫টি বিরাষ্ট্রীয়করণ, ৮টি জুট মিলের পুঁজি প্রত্যাহার এবং একটি জুট মিল (বনানী) ময়মনসিংহ জুট মিলের সঙ্গে একীভূত করার পর বিজেএমসি নিয়ন্ত্রিত মিলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮টিতে। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২টিতে।

২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ পাট খাতকে লাভজনক করার অঙ্গীকার করে। তারা ক্ষমতায় আসার পর বিজেএমসিকে লাভজনক করতে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। এটি বাস্তবায়নে সরকার বিজেএমসির দেনা পরিশোধ করতে ৫ হাজার ২৪১ কোটি টাকা দেয়। এই অর্থ দিলে ভবিষ্যতে বিজেএমসির জন্য আর কোনো আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হবে না—এ শর্তে পাট মন্ত্রণালয়, বিজেএমসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া খুলনার খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী জুট মিলস ও ফোরাম কার্পেটস ফ্যাক্টরি ফিরিয়ে নিয়ে চালু করে সরকার।

এদিকে, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদান ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। নানা কর্মসূচি পালনের পর আগামী ১৬ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় মজুরি কমিশন-২০১৫ প্রদান করা হবে, এই আশ্বাসে গত ৪ জানুয়ারি খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত সাত পাটকলের শ্রমিকরা ফের কাজে যোগ দেয়।

কেন হচ্ছে লোকসান :রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর লোকসানের কারণ সম্পর্কে পাটকলের শ্রমিক ও কর্মকর্তারা জানান, ভরা মৌসুমে পাটের দাম কম থাকে। কিন্তু তখন বিজেএমসি পাট কেনে না। দাম বাড়ার পর তারা মাঠে নামে। অন্যদিকে বিপণন বিভাগের অদক্ষতার কারণে পাটপণ্যের দাম কম মেলে। ফলে পাটজাত পণ্য অবিক্রীত থাকে। তার ওপর দীর্ঘ ৭০ বছরের পুরাতন মেশিনারিজ দিয়ে চাহিদামতো উত্পাদন করা আর সম্ভব নয়। প্রশাসন ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রায়শই সাংঘর্ষিক অবস্থা থাকার কারণেও মিলগুলোর উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। এছাড়া শ্রমিক অদক্ষতা ছাড়াও বেশ কিছু কারণ জড়িয়ে আছে এসব পাটকলের লোকসানের পেছনে।

Source – The Ittefaq.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here