তিন বছরের পূর্বাভাস: বেসরকারি ঋণ বাড়বে, কমবে রেমিটেন্স

0
365

আগামী তিন বছরে দেশে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে, কিন্তু কমবে রেমিটেন্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে বিনিয়োগ বাড়লেও আমদানি-রফতানি খাতের বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির হার থাকবে অপরিবর্তিত। পাশাপাশি এ সময়ে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে বলে সতর্কতামূলক পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য তৈরি করা কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এ কাউন্সিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় আগামী তিন অর্থবছরেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে। এ কারণে প্রতি অর্থবছরে গড়ে দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হবে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পরের অর্থবছরে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল নেয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর পরের দুই অর্থবছরে এ হার দশমিক ১ শতাংশ করে বাড়ানো হবে। এতে ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা অর্জিত হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। গত মে পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৯ শতাংশেরও কম। চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতি নিয়েও আগামী তিন অর্থবছরে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলো আমানত সংকটের কারণে সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে এ খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না। এ খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে হলে ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে হবে। এতে ঋণের সুদের হার কমবে। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই ঋণের চাহিদা বাড়বে। এদিকে ঋণের চাহিদা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি অর্থবছর টাকার প্রবাহ ১২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশের কম। বাকি ৯ শতাংশ ঘাটতি রেখেই আগামী অর্থবছরে সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পরের দু’বছরে ১২ দশমিক ৮ ও ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছর বাজারে টাকার প্রবাহ ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ঘাটতি রেখেই আগামী তিন বছরে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন আরও বাড়ানো হয়েছে। ফলে ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রতিবেদনে দেখা যায়, টাকার প্রবাহ ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির হারও বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছর মোট জিডিপিতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের দুই অর্থবছরে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসে বেসরকারি খাত থেকে। চলতি অর্থবছরের মোট জিডিপির আকারের মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ধরা হয়েছিল ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে এ লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী তিন অর্থবছরেও এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দা চলছে। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট এই মন্দাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যে গত কয়েক বছর ধরেই বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। রেমিটেন্স দিয়ে এ ঘাটতি মেটানো হয়। কিন্তু রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। ফলে এ খাতে ভারসাম্যহীনতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে মে পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে একই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে ধরা হয়েছে ১২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৩ শতাংশ। এর পরের দুই অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১২ শতাংশ ও ১১ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই হারে প্রবৃদ্ধি কমলে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে ভারসাম্যহীনতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের রফতানি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। আগামী তিন বছরে এ খাতে প্রতিবছর গড়ে ১২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছর আমদানি ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেক। আগামী তিন বছরে এ খাতে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।

Source – Jugantor.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here