বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিজিএমইএ : পোশাক খাতে ৩% নগদ প্রণোদনা দাবি

0
288

দেশের তৈরি পোশাক শিল্প চার দশক পার করলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখনো শিশু বলে মনে করেন এ শিল্পের মালিক-প্রতিনিধিরা। দুর্বল এ শিল্পের জন্য রফতানিতে কমপক্ষে ৩ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে এক হোটেলে বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা এ দাবি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ড. রুবানা হক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ, সহসভাপতি এসএম মান্নান, এমএ রহিম মশিউল আজম। এছাড়া সংগঠনটির বর্তমান পর্ষদের পরিচালক, কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। 

২০১৯-২০ প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার আগে ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা চেয়েছিল বিজিএমইএ। কিন্তু ১৩ জুন সংসদে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে এ শিল্পের জন্য ১ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘আমাদের এ দেশটিতে একটা প্রবণতা আছে—সাধারণকে গুরুত্ব দেয়া হয়, মেধাতন্ত্র সবসময় মার খায়। আমরা এত কষ্ট করে উদ্যোক্তা তৈরি করি, কর্মসংস্থান করি কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের শুনতে হয়—আমরা পরিপক্ব, আমাদের আর সাহায্য-সহযোগিতার দরকার নেই। এটা খুবই কষ্টকর।’

রুবানা হক বলেন, এ শিল্পটি কি আসলেই পরিপক্ব? প্রবৃদ্ধি দুই অংকের হলে সেই শিল্পকে দ্রুত বর্ধনশীল বলা যায়। কিন্তু গত ১০ বছরে আমাদের গড় প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। তারপর যদি নতুন উদ্ভাবন না থাকে, সেই শিল্প ধসে যায়। গত দেড় মাসে ৩০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ঈদের সময় খুব কষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতিটি কারখানাকে ডেকে ডেকে বুঝিয়ে, অনেক কিছু করে শেষ পর্যন্ত বেতন-বোনাস দিয়ে শ্রমিককে বাড়ি পাঠাতে হয়েছে। অনেক কারখানা মেশিন বিক্রি করে হলেও শ্রমিককে টাকা দিয়েছে। কাজেই সারাক্ষণ বললে হবে না যে এ পরিপক্ব শিল্পের প্রণোদনা দরকার নেই।

কৃষির সঙ্গে পোশাক শিল্পে তুলনায় আপত্তি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ধানের কৃষকের সঙ্গে আমাদের পোশাক শ্রমিকের তুলনা চলে, আমাদের তুলনা চলে না, এটা উচিত না। আমরা তো এই টাকাটা পকেটস্থ করি না। এখানে প্রচুর লোক কাজ করে, পাঁচ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল, অর্থনীতি নির্ভরশীল।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশীয় পোশাক শিল্পকে দুর্বল শিশু মনে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে একেবারে নির্জন লোকালয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা দুর্বল শিশুর মতো মনে হয়। কারণ পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, হালচাল বদলে গেছে, ভোক্তাদের ধরন বদলে গেছে। কিন্তু আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। দুর্বল শিশুর অবস্থানে চলে আসছি। কিছু লোক বড় কারখানা করলেই ধরে নেবেন না শিল্পটি ভালো অবস্থায় আছে।

এ সময় জিডিপিতে কৃষি ও পোশাক খাতের অবদানের তুলনা ধরেন রুবানা হক। তিনি জানান, জিডিপিতে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ অবদান কৃষির, সেখানে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। আর পোশাক শিল্পের অবদান ১৬ শতাংশ, অথচ এ খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

১০ বছর ধরে কৃষিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, রফতানি বেড়েছে ৪৪৫ মিলিয়ন ডলার। বিজেএমসির প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। যারা গত চার বছরে লোকসান করেছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি, এ তথ্য উল্লেখ করে পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তত ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এর জন্য অতিরিক্ত প্রণোদনার প্রয়োজন হবে প্রায় ৫ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

৩৫-৪০ বছর পরও পোশাক শিল্প কেন শিশু বা অপরিপক্ব, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে রুবানা হক বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে আমাদের শিশু মনে হয়। কারণ আমাদের নতুন উদ্ভাবন নেই। পরিপক্ব হলে আমরা সবাই মরে যাব, কারণ পরিপক্ব হলে প্রবৃদ্ধি এক অংকে চলে আসবে। অর্থনৈতিক পরিভাষায় পরিপক্ব শিল্প ক্রমহ্রাসমান শিল্প (সানসেট ইন্ড্রাস্ট্রি) হয়ে যায়। সৃষ্টিশীলতা না থাকলে এটি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত বিজিএমইএর অন্য দাবিগুলোর মধ্যে একটি হলো টাকার অবমূল্যায়ন। সংগঠনটির দাবি মোট রফতানি আয়ের ওপর ডলারপ্রতি ১ টাকা অবমূল্যায়ন হলে পোশাক খাত বছরে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পায়। এছাড়া ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অংকের কোটায় আনার সিদ্ধান্ত কার্যকরের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আশা করে বিজিএমইএ।

Source – Banik Barta.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here