বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও শিশুশ্রমে জড়িত রয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু। এরা ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কাজ করছে। এদের মাথাপিছু প্রতিদিন আয় ৩ থেকে ৫ শ’ টাকা। ২০০৩ সালে শিশুশ্রমে নিয়োজিত ছিলো ৩৪ লাখ শিশু। ২০১৩ সালে তা কমে ১৭ লাখে দাঁড়ালেও গত ৫ বছরে শিশুশ্রম যেভাবে হ্রাস পেয়েছে, তা মোটেই আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শিশুশ্রমের ঝুঁকিপূর্ণ ১১টি সেক্টর হচ্ছে- তামাক-বিড়ি, এ্যালুমিনিয়াম, সাবান, প্লাস্টিক, কাঁচ, স্টোন ক্রাসিং, স্পিনিং, সিল্ক, ট্যানারি, শিপ ব্রেকিং ও তাঁত।
বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে এবার আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শিশুশ্রম বন্ধের দাবি উঠেছে বেশ জোরেশোরেই। এ দাবিতে কঠোর অবস্থানে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও। এ দাবি জোড়ালো হয়েছে বাংলাদেশেও। তবে শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের উদ্যোগ অপ্রতুল। যদিও গতকাল মঙ্গলবার (১১ জুন) শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শিশুশ্রম বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানের কথ জানিয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেছেন, ‘সবার সহযোগিতা পেলে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
তবে এসব ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক অনেক। রাজধানীসহ সারা দেশে শিশুশ্রম এখন অপ্রতিরোধ্য। বাংলাদেশের শিশুশ্রম নিয়ে নানা সমীক্ষা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতে দেখা গেছে- অভিভাবকদের অসচতেনতা এবং শিশুদের কাজে নামিয়ে অর্থ আয়ের কারণেই থামছে না শিশুশ্রম।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু শ্রমে নিয়োজিত। এদের মাথাপিছু প্রতিদিন আয় ৩ থেকে ৫শ’ টাকা ধরে মাসে আয় ৯ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে সরকারিভাবে মাথাপিছু মাসে ১ হাজার টাকা করে দিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করা অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, অভিভাবকদের সচেতন করার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা বাড়িয়ে শিক্ষায় তাদের মনোনিবেশ করা গেলে শিশুদের শ্রম থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
শিশুশ্রম বন্ধের লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদের সঙ্গে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও, ইউসেপ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
সর্বশেষ গত মাসে শিশুশ্রম বন্ধ করা নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে বর্তমান শিশুশ্রম হ্রাস পাওয়া তথ্য আশানুরূপ নয় বলে মতামত দেয়। এ বৈঠকেও অভিভাবকদের সচেতন করার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৩ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সে সময় শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশু ছিলো ৩.৪ মিলিয়ন (৩৪ লাখ)। এর দশ বছর পর অর্থাৎ ২০১৩ সালের শিশুশ্রম সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১.৭ মিলিয়ন (১৭ লাখ)। তার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন (১২ লাখ)। ২০০৩ এর পরিসংখ্যানের তুলনায় ২০১৩ সালের সমীক্ষায় শিশুশ্রম হ্রাস পেলেও তা আশানুরূপ নয় বলে মতামত দিয়েছে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়। শিশুশ্রম বন্ধ করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন পর্যায়ে মোট ৯০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে প্রত্যাহার করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের পিতা-মাতাকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হয়েছে।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৭-’১৮ অর্থ বছরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শিশুশ্রমে ১১টি সেক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এগুলো হচ্ছে- এ্যালুমিনিয়াম, তামাক/বিড়ি, সাবান, প্লাস্টিক, কাঁচ, স্টোন ক্রাসিং, স্পিনিং, সিল্ক, ট্যানারী, শিপ ব্রেকিং ও তাঁত।
তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, ২০১৭-’১৮ অর্থবছরে ঝুঁকিপূর্ণ এই ১১টির ৬টি সেক্টরের ২৩৪টি কারখানা থেকে ৩৭৫ জন শিশুকে শিশুশ্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এ সময় শিশুশ্রমে নিযুক্ত করা শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। এসংক্রান্ত ১৮৬টি মামলার মধ্যে ৫১টি নিষ্পত্তি করা হয়। চলমান রয়েছে ১৩৫টি মামলা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এসব বিষয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘শিশুশ্রম বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। সেই অনুযায়ী কাজ করছে সরকার। সবার সহযোগিতা পেলে ২০২৫ সালর মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
Source – Dainik Jagoron.