মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ফায়দা ঘরে তোলার পরিকল্পনা করছে ভারত। চীনে নিজেদের কোম্পানি ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রফতানি বাড়াতে এবং বাণিজ্যযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে চীন থেকে যেসব বিদেশী কোম্পানি নিজেদের ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে, তাদের নিজেদের দেশে টানতে একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছে ভারত। খবর ইকোনমিক টাইমস।
প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে নেয়া বাণিজ্য বিভাগের কৌশলপত্রে ইলেকট্রনিকস, টেলিকম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের আমদানি বিকল্প নিয়ে খাতওয়ারি কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই চীন থেকে কেনা হয়। ২০১৮ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল রেকর্ড ৬ হাজার ৩০৪ কোটি ডলার।
এই কৌশলপত্রটি তৈরি করেছে ভারতের বাণিজ্য বিভাগ। এটি বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছে পেশ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, প্রভু চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কৌশল গ্রহণে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেন। এ কৌশলের মূল লক্ষ্য চীনে রফতানি বৃদ্ধি এবং স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারারদের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করে আমদানি হ্রাস।
টেলিকম খাতের বিষয়ে বাণিজ্য বিভাগ বলছে, চীনের বৈষম্যমূলক ও সংরক্ষণমূলক নীতির কারণে ভারতের কোম্পানিগুলো তাদের প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছে না। স্থানীয়ভাবে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ও ক্যামেরা মডিউলের মতো পণ্য উৎপাদন ও টেলিকম খাতের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল গঠনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে খাতটি।
সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে বিভাগটি বলছে, প্রতিযোগিতামূলক নিলাম ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি ক্রয়ে লাগাম টানার প্রয়োজন রয়েছে ভারতের।
কৌশলপত্রে বলা হচ্ছে, গাড়ির যন্ত্রণাংশের (অটো কম্পোনেন্ট) ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন শক্তিশালীকরণে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের মানসম্পন্ন ও সুলভ টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজ চালু করতে হবে। প্রস্তাবিত রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে কৃত্রিম ফাইবার টেক্সটাইলকে বাদ রাখা এবং এ খাতে সহজতর পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) আরোপের জন্য কৌশলপত্রে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কৌশলপত্রে বলা হচ্ছে, যেসব বিদেশী কোম্পানি চীন থেকে নিজেদের ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা সরিয়ে নিতে চাচ্ছে তাদের জন্য বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ও বৃহত্তর ভোক্তা বাজার নিয়ে ভারত একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য এবং ভারতে কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে চীনা ম্যানুফ্যাকচারারদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। ইলেকট্রনিকস, কনজিউমার অ্যাপ্লায়েন্স, কনজিউমার ইলেকট্রনিকস, টেক্সটাইল, হেলথকেয়ার ইকুইপমেন্ট ও হেভি ইন্ডাস্ট্রি খাতের বিভিন্ন কোম্পানি ভারতে নিজেদের কারখানা সরিয়ে আনতে চাচ্ছে। রফতানিকারকদের সুবিধা দেয়ার জন্য এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টে (এশিয়ার সাত দেশের মধ্যকার চুক্তি) এবং প্রস্তাবিত আরসিইপিতে শুল্ক হ্রাসের বিষয়টি যুক্ত করতে কৌশলপত্রে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান মার্চেনডাইজ এক্সপোর্ট ফর ইন্ডিয়া স্কিমের (এমইআইএস) পর্যাপ্ত বিকল্প হিসেবে রফতানি প্রণোদনা ও কৃষি, ডেইরি ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের জন্য আরো বেশি বাজার প্রবেশাধিকার অর্জনের প্রয়োজনীয়তার কথা কৌশলপত্রে বলা হয়েছে। বিভাগটির মতে, ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধ নিবন্ধনের জন্য নিয়ন্ত্রক বাধা এবং দীর্ঘ ও অনির্দিষ্ট সময়সীমার সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডাটার বিস্তারিত জমা দিতে এবং নিবন্ধনের সময় ওষুধ তৈরি প্রক্রিয়া প্রকাশ করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে চীনের নিয়ন্ত্রক নির্ধারিত ওষুধের মান ও দেশটিতে তথ্য পূরণের প্রক্রিয়া নিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম আয়োজন এবং নিবন্ধনের সময়সীমা তিন-পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে এক বছরে নামিয়ে আনার জন্য ভারত এবং চীনের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা করবে।
Source – Banik Barta.